"‘তুফান’ সিনেমা রিভিউ: শাকিব খান ও রায়হান রাফীর নতুন চমক কি পাল্টে দিচ্ছে বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি?"
শাকিব খানের নতুন সিনেমা ‘তুফান’ ঈদে মুক্তির পর থেকে দেশজুড়ে সিনেমাপ্রেমীদের মাঝে সৃষ্টি করেছে ব্যাপক উত্তেজনা। শুধু স্টার সিনেপ্লেক্স নয়, দেশের প্রায় প্রতিটি প্রেক্ষাগৃহেই যেন নতুন করে ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য। এমনকি মিরপুরের সনি স্কয়ারের স্টার সিনেপ্লেক্সে, বুধবার রাতের শেষ শো দেখার পর দর্শকদের এক ভিন্ন রকম উচ্ছ্বাস দেখা যায়। বড় পর্দার সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলার হিড়িক লেগে যায়, আর হল থেকে বের হওয়ার সময় কেউ কেউ গুনগুন করে গাইছিলেন, “তুমি কোন শহরের মাইয়া গো, লাগে উরাধুরা..।”এমনকি শুধু শাকিব খানের নামেই কি এত উন্মাদনা? নাকি এর পেছনে আরও কিছু কারণ লুকিয়ে আছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমাদের একটু পিছিয়ে তাকাতে হবে। ভাবতে হবে, ঠিক কী এমন ছিল ‘তুফান’ ছবিতে যা একে এত আলোচিত করে তুলেছে?
সিনেমার প্রেক্ষাপট:
‘তুফান’ সিনেমার গল্প আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় ৯০-এর দশকে, যখন আন্ডারওয়ার্ল্ডের অন্ধকার দুনিয়া ছিল অনেকটাই রহস্যময় এবং ভয়ংকর। এই সিনেমার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সেই সময়ের একজন ডন, যার জীবন আর লড়াইকে ঘিরে গড়ে উঠেছে পুরো গল্প। ৯০-এর দশকের সেই সময়টা ছিল এমন এক যুগ, যখন বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল সিনেমা। আর এই সিনেমা দেখার প্রধান মাধ্যম ছিল প্রেক্ষাগৃহের বড় পর্দা। টেলিভিশনে শুক্রবারের বাংলা সিনেমা দেখা বা হলে গিয়ে সদ্য মুক্তি পাওয়া ছবি উপভোগ করা ছিল মানুষের জন্য বিরাট আকর্ষণ।
তখনকার দিনে, বর্তমানের মতো ইন্টারনেট, ইউটিউব, কিংবা নেটফ্লিক্সের মতো প্ল্যাটফর্ম ছিল না। বিনোদনের জন্য মানুষ প্রেক্ষাগৃহেই ছুটতেন। হলের অন্ধকারে বসে সিনেমার প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতেন, আর তা নিয়ে সপ্তাহজুড়ে আলোচনা করতেন বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে। এই সবকিছুই ছিল নব্বইয়ের দশকের এক অমূল্য অভিজ্ঞতা। যারা সেই সময়ে বেড়ে উঠেছেন, তাদের কাছে এই সিনেমা শুধুই একটি গল্প নয়; বরং তা এক টুকরো স্মৃতি।
‘তুফান’ সিনেমা ঠিক সেই সময়ের অনুভূতিগুলোকে আবারও জীবন্ত করে তুলেছে। সিনেমার নির্মাণশৈলী, গল্প বলার ধরণ এবং চরিত্রগুলোর মাধ্যমে সেই সময়ের আবেগকে তুলে ধরা হয়েছে অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে। পরিচালক রায়হান রাফী সেই পুরনো দিনের আন্ডারওয়ার্ল্ডের জগৎকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যা দেখে দর্শকরা নস্টালজিয়ার এক জগতে হারিয়ে যান।
সিনেমার প্রতিটি দৃশ্যে যেন নব্বইয়ের দশকের ছোঁয়া রয়েছে। পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে চরিত্রগুলোর ভাবভঙ্গি—সবকিছুতেই রয়েছে সেই সময়ের ছাপ। এই সময়ের গল্প বলার ধরন এবং নির্মাণশৈলী দর্শকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় অতীতের সেই দিনগুলোতে, যখন হলে গিয়ে সিনেমা দেখা ছিল প্রধান বিনোদনের মাধ্যম। যারা সেই যুগে বড় হয়েছেন, তারা এই সিনেমার মাধ্যমে যেন সেই পুরনো দিনের অনুভূতি আবারও ফিরে পাচ্ছেন।
তাছাড়া, নব্বইয়ের দশকের গল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকটাই রোমাঞ্চ, ভালোবাসা এবং বিপদের মিশেল। সিনেমাটি সেই সময়ের ড্রামা এবং অ্যাকশনকে এতটাই নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছে যে, দর্শকরা অনায়াসেই সেই সময়ের একটি ছবি মনে করতে পারেন। নস্টালজিয়ার দরজা খুলে দেওয়া এই সিনেমা শুধু পুরনো দিনের দর্শকদের জন্যই নয়, নতুন প্রজন্মের কাছেও তা হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয় এক অভিজ্ঞতা।
‘তুফান’ শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি এক ধরনের টাইম মেশিন, যা আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই সময়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডের ভীতি এবং রহস্যময় জগতে। যারা নব্বইয়ের দশকে তাদের শৈশব কাটিয়েছেন, তাদের কাছে এই সিনেমা এক অমূল্য রত্ন। সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণ, সেই সময়ের আবেগ এবং উত্তেজনা—সবকিছুই যেন নতুন করে জীবন্ত হয়ে উঠেছে ‘তুফান’ এর পর্দায়।
রায়হান রাফী বাংলা চলচ্চিত্রের নতুন দিশারী
রায়হান রাফী বর্তমান বাংলা চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যার প্রতিভা এবং নির্মাণশৈলী ইতিমধ্যেই দর্শক এবং সমালোচকদের মন জয় করে নিয়েছে। তিনি শুধু একজন পরিচালক নন, বরং নতুন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণে এক প্রতিশ্রুতিশীল স্রষ্টা। রাফীর প্রতিটি কাজেই থাকে তার বিশেষ স্বকীয়তা, যা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে। তার নির্মিত প্রতিটি সিনেমাই যেন দর্শকদের সামনে নতুন কিছু নিয়ে আসে, যা কখনোই পুরনো বা গতানুগতিক মনে হয় না।
রাফীর ক্যারিয়ারে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সিনেমা হলো ‘দহন’, ‘পোড়ামন-২’, ‘পরাণ’ এবং ‘সুড়ঙ্গ’। এসব সিনেমা মুক্তির পর থেকেই সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং বক্স অফিসেও সাফল্যের মুখ দেখেছে। তার সিনেমাগুলোতে যেমন থাকে সমাজের বাস্তবধর্মী চিত্র, তেমনি থাকে চরিত্রগুলোর গভীর মানবিকতা। তিনি দক্ষতার সঙ্গে সিনেমার প্রতিটি দৃশ্যকে জীবন্ত করে তোলেন, যা দর্শকদের এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেয়।
‘তুফান’ সিনেমাটির ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। রাফী এখানে তার সেই মুনশিয়ানা আবারও প্রমাণ করেছেন। সিনেমাটির নির্মাণশৈলী, চিত্রনাট্য এবং সংলাপের প্রতি তার সূক্ষ্ম দৃষ্টি দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে একজন অভিনেতার ভেতরের সত্ত্বা বার করে আনা যায় এবং তাকে একেবারে নতুনভাবে উপস্থাপন করা যায়। শাকিব খানের মতো একজন তারকা অভিনেতার সঙ্গে কাজ করে তার অভিনয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন রাফী, যা আগের শাকিবকে একেবারে নতুনভাবে তুলে ধরেছে দর্শকদের সামনে।
রায়হান রাফী শুধু একজন দক্ষ পরিচালকই নন, তিনি একজন ভাবুক স্রষ্টাও। তার সিনেমাগুলোতে যেমন থাকে জীবনের গল্প, তেমনি থাকে দর্শকের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের ক্ষমতা। তিনি জানেন, কীভাবে গল্প বলতে হয় এবং সেই গল্পের সঙ্গে দর্শকদের আবেগকে জুড়ে দিতে হয়। তার প্রতিটি সিনেমায় থাকে সমাজের কোনো না কোনো দিকের প্রতিফলন, যা দর্শকদের এক নতুন ভাবনার জগতে নিয়ে যায়।
‘তুফান’ সিনেমায় রাফী সেই একই দক্ষতা এবং প্রজ্ঞা দেখিয়েছেন। শাকিব খানের ভেতরের অভিনয় প্রতিভাকে তিনি এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। শাকিবের অভিনয়ের প্রতিটি দিককে বার করে এনে তাকে এক নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন তিনি। সিনেমাটির সংলাপ, চিত্রনাট্য এবং চরিত্রগুলোর গভীরতা সবকিছুর মধ্যেই রয়েছে রাফীর মুন্সিয়ানা।
রায়হান রাফীর নির্মাণে যে বৈচিত্র্য এবং গভীরতা থাকে, তা শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং দর্শকদের চিন্তার খোরাকও জোগায়। তার সিনেমাগুলো যেমন বক্স অফিসে সাফল্য আনে, তেমনি সমালোচকদের কাছেও প্রশংসিত হয়। ‘তুফান’ এর মাধ্যমে রাফী আবারও প্রমাণ করেছেন যে, তিনি শুধু বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রতিভাবান পরিচালকই নন, বরং বাংলা চলচ্চিত্রের ভবিষ্যতের দিশারী।
তুফান সিনেমায় শাকিব খানের অভিনয় কেমন ছিল?
‘তুফান’ সিনেমায় শাকিব খান তার ক্যারিয়ারের এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছেন। যিনি দীর্ঘদিন ধরে বাংলা সিনেমার সবচেয়ে বড় তারকা হিসেবে পরিচিত, এবার তিনি নিজেকে ভেঙে গড়ে তুলেছেন এক নতুন অবতারে। শাকিব খানকে আমরা যে চিরাচরিত ধাঁচে দেখে এসেছি, তার চেয়ে এখানে তাকে দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপে। তার অভিনয় এবং মেকআপ-গেটআপে যে নতুনত্ব এসেছে, তা তাকে করে তুলেছে আরও বেশি আকর্ষণীয় এবং শক্তিশালী।
শাকিব খানের নতুন লুক এবং চরিত্রে ঢোকার দক্ষতা প্রমাণ করে যে তিনি শুধু একজন অভিনেতা নন, বরং একজন বহুমুখী শিল্পী, যিনি নিজের সীমা অতিক্রম করতে সর্বদা প্রস্তুত। তার উপস্থিতি যেন পুরো সিনেমার প্রতিটি ফ্রেমকে জীবন্ত করে তুলেছে। শাকিব খানের এমন পরিবর্তন সাধারণ দর্শকদের মধ্যে বিস্ময় এবং মুগ্ধতা তৈরি করেছে, বিশেষ করে যারা তাকে দীর্ঘদিন ধরে দেখছেন, তারা এই নতুন রূপে তাকে দেখে রীতিমতো অভিভূত।
শাকিবের আগমন দৃশ্য থেকে শুরু করে তার সংলাপ, প্রতিটি মুহূর্তই যেন দর্শকদের হৃদয় জয় করে নিয়েছে। বিশেষ করে সিনেমা হলে যখন শাকিব খানের দৃশ্য আসে, তখন দর্শকদের শিস, হাততালি আর উচ্ছ্বাসের জোয়ারে প্রেক্ষাগৃহে এক ভিন্ন রকমের পরিবেশ তৈরি হয়। এসব মুহূর্তগুলো শুধু শাকিবের অভিনয়ের দক্ষতাই নয়, তার প্রতি দর্শকদের অপরিসীম ভালোবাসারও প্রমাণ দেয়।
শাকিব খান বরাবরই তার ফ্যানবেসের প্রতি যত্নশীল, কিন্তু ‘তুফান’ এ তিনি নিজেকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, তা একধরনের সাহসী পদক্ষেপও বটে। বাংলাদেশের সিনেমায় এমন মেকআপ-গেটআপ সাধারণত কমই দেখা যায়, বিশেষত নায়কদের ক্ষেত্রে। এই সিনেমায় শাকিব খানকে ভারতের দক্ষিণী সিনেমার নায়কদের মতোই দৃষ্টিনন্দন এবং প্রভাবশালী দেখিয়েছে, যা তার অনুরাগীদের জন্য বাড়তি আনন্দের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার অভিনয়ের গভীরতা, চরিত্রের প্রতি তার নিষ্ঠা, এবং সেই সঙ্গে শারীরিক ট্রান্সফরমেশন—সবকিছুই তাকে নতুনভাবে চিনিয়েছে দর্শকদের কাছে।
শাকিব খানের ফ্যানবেস বরাবরই বিশাল, কিন্তু ‘তুফান’ এর মাধ্যমে তিনি সেই ফ্যানবেসকে আরও শক্তিশালী করেছেন। শুধু যে তার পুরনো ভক্তরা তাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন তা নয়, বরং নতুন প্রজন্মের দর্শকদের কাছেও তিনি সমানভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। সিনেমার প্রতিটি সংলাপে, প্রতিটি দৃশ্যে শাকিব খান তার চরিত্রের গভীরতা, অনুভূতি, এবং আবেগের নিখুঁত প্রকাশ ঘটিয়েছেন। এটি প্রমাণ করে, তিনি কেবল জনপ্রিয়তার জন্য অভিনয় করেন না, বরং প্রতিটি চরিত্রকে নিজের মতো করে জীবন্ত করে তোলার চেষ্টা করেন।
'তুফান' এ শাকিব খান যেন তার ক্যারিয়ারের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। এই সিনেমা শুধু তার অভিনয় জীবনের জন্য একটি মাইলফলক নয়, বরং বাংলা সিনেমার ইতিহাসেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হবে।
সহ-অভিনেতাদের সমৃদ্ধ উপস্থিতি এবং টেকনিক্যাল দক্ষতা:
‘তুফান’ সিনেমার সাফল্যের পেছনে একগুচ্ছ প্রতিভাবান অভিনেতার অভিনয়ও সমানভাবে কৃতিত্বের দাবিদার। শাকিব খানের পাশাপাশি সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন দেশের প্রখ্যাত অভিনেতারা। চঞ্চল চৌধুরী, মিশা সওদাগর, গাজী রাকায়েত, ফজলুর রহমান বাবু, শহীদুজ্জামান সেলিম, এবং সালাউদ্দিন লাভলু—এই সব গুণী শিল্পীরা তাদের অভিনয় দক্ষতায় সিনেমাটিকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। প্রতিটি চরিত্রের গভীরতা, প্রতিটি সংলাপের প্রভাব—সবই তারা নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাদের অভিনয় শুধু শাকিব খানের পারফরম্যান্সকেই সমর্থন করেনি, বরং সিনেমার গল্পকেও করেছে আরও বেশি প্রাণবন্ত।
অন্যদিকে, দুই বাংলার দুই জনপ্রিয় নায়িকা মিমি চক্রবর্তী এবং মাসুমা রহমান নাবিলা এই সিনেমার রূপালী পর্দাকে আরও আলোকিত করেছেন। তাদের উপস্থিতি শুধু সিনেমাটির গ্ল্যামারই বাড়ায়নি, বরং গল্পের ভিন্নতা এবং পরিপূর্ণতায়ও অবদান রেখেছে। মিমি চক্রবর্তীর সাবলীল অভিনয় এবং মাসুমা রহমান নাবিলার সংযত পারফরম্যান্স সিনেমার গল্পের সঙ্গে এক সুরে বেজেছে, যা দর্শকদের মন ছুঁয়ে গেছে।
তবে, শুধু তারকাবহুল কাস্টিংই নয়, সিনেমাটির টেকনিক্যাল দিকগুলোও প্রশংসার দাবিদার। সিনেমার প্রোডাকশন ভ্যালু, সেট ডিজাইন, ক্যামেরার কাজ, এবং এডিটিং সবকিছুই খুব যত্নসহকারে করা হয়েছে, যা সিনেমার ভিজ্যুয়াল ইম্প্যাক্টকে আরও জোরালো করেছে। এসভিএফ, আলফা আই, এবং চরকি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো মিলে এমন এক উচ্চমানের প্রোডাকশন তৈরি করেছে, যা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
প্রমোশনাল ক্যাম্পেইনেও ছিল এক অসাধারণ ছোঁয়া। সিনেমা মুক্তির আগে থেকেই দর্শকদের মধ্যে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, তা এই ক্যাম্পেইনের ফল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে এক্সক্লুসিভ কন্টেন্ট প্রকাশের মাধ্যমে দর্শকদের মধ্যে কৌতূহল জাগিয়ে তোলা হয়। কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং তারকাদের প্রতিক্রিয়া শেয়ার করাও দর্শকদের হলে টেনে আনতে বড় ভূমিকা রেখেছে। এমন সমন্বিত প্রচারণা আর কৌশলগত পদক্ষেপ ‘তুফান’কে সবার চোখের সামনে নিয়ে এসেছে।
সবমিলিয়ে, সহ-অভিনেতাদের শক্তিশালী পারফরম্যান্স, টেকনিক্যাল দিকের নিখুঁত কাজ এবং দক্ষ প্রমোশনাল কৌশল মিলিয়ে ‘তুফান’ সিনেমাটি শুধুমাত্র একটি বিনোদনমূলক চলচ্চিত্র নয়, বরং এটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের জন্য একটি বিশেষ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘তুফান’ সিনেমার গ্রহণযোগ্যতা:
‘তুফান’ মুক্তির পর থেকে দর্শকদের মাঝে যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে, তা চোখে পড়ার মতো। সিনেমাটি নিয়ে যেভাবে আলোচনা শুরু হয়েছিল, তাতে প্রত্যাশার পারদ ছিল আকাশচুম্বী। আর মুক্তির পর সেই প্রত্যাশা যে পূরণ হয়েছে, তা দর্শকদের প্রতিক্রিয়াতেই স্পষ্ট। স্টার সিনেপ্লেক্সের রাতের শোতে ভিড় দেখে সহজেই বোঝা যায়, সিনেমাটি দর্শকদের হৃদয় জয় করতে পেরেছে। দর্শকদের মধ্যে এমন উন্মাদনা প্রমাণ করে যে, সিনেমাটি শুধু আলোচনা তৈরি করেই থেমে থাকেনি, বরং বাস্তবে মানুষকে হলমুখী করতে সক্ষম হয়েছে।
ময়মনসিংহের ছায়াবাণী সিনেমা হলের উদাহরণ আরও চমকপ্রদ। সেখানে নিয়মিত শো-এর পাশাপাশি আয়োজন করা হচ্ছে ‘মিডনাইট স্পেশাল শো’। ডিজিটাল যুগে এককথায় সিঙ্গেল স্ক্রিনে এমন দর্শক উপস্থিতি বিরল। এ ঘটনা দেখিয়ে দেয় যে, বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি নতুন করে দর্শকদের আকর্ষণ করতে শুরু করেছে। এই ধরনের দর্শকপ্রিয়তা আমাদের মনে করিয়ে দেয় পুরনো সেই দিনগুলোকে, যখন সিনেমা ছিল মানুষের বিনোদনের প্রধান মাধ্যম, এবং বড় পর্দার প্রতি মানুষের এই ভালোবাসা এখনো কমেনি।
এই অভূতপূর্ব সাফল্য প্রমাণ করে, 'তুফান' শুধুমাত্র একটি সিনেমা নয়; এটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে একটি নতুন অধ্যায় শুরু করার সংকেত। সিনেমাটি যে ধরনের গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে, তা দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্য নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত।
সিক্যুয়েলের সম্ভাবনা:
সিনেমার শেষে যখন স্ক্রিনে ভেসে উঠল ‘লোডিং-২’, দর্শকদের উচ্ছ্বাস আরও বেড়ে যায়। এর মানে হচ্ছে, ‘তুফান’ শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি একটি নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজির সূচনা। বাংলাদেশের সিনেমায় সিক্যুয়েল বা ফ্র্যাঞ্চাইজি ধারণা খুব কম দেখা গেছে। কিন্তু এই সিনেমাটি সেই ধারার পথিকৃৎ হতে পারে।
সামগ্রিক মূল্যায়ন
‘তুফান’ নিছক একটি ব্যবসাসফল কমার্শিয়াল সিনেমা নয়; এটি এমন একটি চলচ্চিত্র, যা নিখাদ বিনোদন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। পরিচালক রায়হান রাফী এবং শাকিব খান মিলে এমন একটি শক্তিশালী সিনেমা উপহার দিয়েছেন, যা শুধু দর্শকদের মন জয় করেনি, বরং দেশের সিনেমা শিল্পের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
দর্শকদের উচ্ছ্বাস, হলে উপচে পড়া ভিড় এবং চারপাশের আলোচনা সবই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ‘তুফান’ কেবল একটি সফল সিনেমা নয়, বরং এটি বাংলাদেশের সিনেমা জগতে এক নতুন যুগের সূচনা করতে পারে। এমন একটি সময় যখন দেশীয় সিনেমার জনপ্রিয়তা কিছুটা ম্লান হয়েছিল, ‘তুফান’ এসে যেন সেই স্থবিরতার অবসান ঘটিয়েছে।
এবারের ঈদে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটি হয়তো সত্যিই একটি নতুন 'তুফান' বইয়ে দিতে চলেছে, যা দীর্ঘদিন ধরে জীর্ণ দশায় ভোগা বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করতে পারে।